বিট রুট দিয়ে রূপচর্চা
মিল্কশেক এর ১০টি উপকারীতা ও অপকারীতাবিট রুট দিয়ে রূপচর্চা করলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও মসৃণ। বিট রুট হলো বিট উদ্ভিদের মূল অংশ যা একটি পুষ্টিকর সবজি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।এটি রূপচর্চাতেও বেশ জনপ্রিয়। এটি সাধারণত গাঢ় লাল বা বেগুনি রঙের হয়ে থাকে।
আপনি যদি বিট রুট দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে
চান তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। বিট রুট দিয়ে কিভাবে
রূপচর্চা করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে হলে এই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পেজ সূচীপত্রঃ বিট রুট দিয়ে রূপচর্চা
- বিট রুট দিয়ে রূপচর্চা
- বিটরুট দিয়ে ফেস প্যাক
- বিট রুট পাউডার দিয়ে রূপচর্চা
- বিট রুট দিয়ে লিপ বাম
- বিট রুট দিয়ে চুল কালার
- বিট রুট পাউডারের উপকারিতা
- বিট রুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম
- বিট রুট জুসের উপকারিতা
- বিট রুট কি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর
- লেখক এর মন্তব্যঃ বিট রুট দিয়ে রূপচর্চা
বিট রুট দিয়ে রূপচর্চা
বিট রুট দিয়ে রূপচর্চা করলে আপনার চেহারা প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর হয়ে উঠবে। বিট রুট একটি প্রাকৃতিক উপাদান এটি দিয়ে রূপচর্চা করলে আপনার চেহারায় কোন ইফেক্ট পড়বেনা। বিট রুট দিয়ে কিভাবে রূপচর্চা করবেন তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
বিটরুট ফেসপ্যাকঃ
- উপাদানঃ ২-৩ চা চামচ বিট রুট রস, ১ চা চামচ বেসন, ১ চা চামচ দুধ বা গোলাপ জল।
- পদ্ধতিঃ বিট রুট রসের সাথে বেসন ও মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর পরিষ্কার মুখে তৈরি করা পেস্টটি লাগাতে হবে। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- উপকারিতাঃ এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে মসৃণ করে।
বিট রুট স্ক্রাবঃ
- উপাদানঃ ১ চা চামচ বিট রুট রস, এক চা চামচ চিনি, ১ চা চামচ নারিকেল তেল বা গোলাপ জল।
- পদ্ধতিঃ সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করুন। তারপর এটি পরিষ্কার মুখে ও গলায় লাগিয়ে হালকাভাবে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন।
- উপকারিতাঃ এটি ত্বকের ডেড সেলস দূর করে এবং ত্বককে নরম করে তোলে।
বিট রুট লিপ বামঃ
- উপাদানঃ ১ চা চামচ বিট রুট রস, একটা চামচ নারিকেল তেল বা ভ্যাসলিন বা ঘি।
- পদ্ধতিঃ বিট রুট রস ও ঘি বা তেল বা ভেসলিন একসাথে মেশাতে হবে। তারপর রাতে ঠোঁটে লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন।
- উপকারিতাঃ এটি ঠোঁটকে প্রাকৃতিকভাবে গোলাপি ও নরম করে।
বিট রুট টোনারঃ
- উপাদানঃ ২ চা চামচ বিট রুট রস, ২ চা চ চামচ গোলাপজল লাগবে।
- পদ্ধতিঃ দুটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে রাখুন। দিনে ২-৩ বার পরিষ্কার মুখে স্প্রে করতে হবে।
- উপকারিতাঃ এটি ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে আদ্র রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
সতর্কতাঃ রোদে বের হওয়ার আগে বিট রুট প্যাক বা রস মুখে লাগিয়ে বের
হবেন না।
নিয়মিত বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা করলে আপনার ত্বক প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর ও সুস্থ
থাকবে।
বিটরুট দিয়ে ফেস প্যাক
বিট রুট দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করলে আপনার ত্বক প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে।এটিএকটি প্রাকৃতিক উপাদান। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী।বিট রুট দিয়ে কোন ধরনের স্কিনের জন্য কোন ধরনের ফেসপ্যাক বানাতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য বিট রুট ফেসপ্যাকঃ
- উপাদানঃ ২ চা চামচ রস, ১ চা চামচ বেসন, ১ চা চামচ দই।
- পদ্ধতিঃ বিট রুট রস, বেসন এবং দই একসাথে মিশিয়ে একটি মসৃণ পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর মুখ পরিষ্কার করে মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- উপকারিতাঃ এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং কালচে দাগ কমাতে সাহায্য করে।
শুষ্ক ত্বকের জন্য বিট রুট ফেসপ্যাকঃ
- উপাদানঃ ২ চা চামচ বিট রুট রস, ১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ কাঁচা দুধ।
- পদ্ধতিঃ সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করতে হবে। তারপর পরিষ্কার মুখে ও গলায় লাগিয়ে পনের মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর নরম কাপড় দিয়ে মুছে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- উপকারিতাঃ এটি ত্বককে আদ্র রাখে এবং ত্বকের শুষ্কতা দূর করে।
অয়েলি ত্বকের জন্য বিট রুট ফেসপ্যাকঃ
- উপাদানঃ ২ চা চামচ বিটরুট রস, ১ চা চামচ মুলতানি মাটি, কয়েক ফোটা লেবুর রস।
- পদ্ধতিঃ বিট রুট রসের সঙ্গে মুলতানি ও লেবুর রস মিশিয়ে একটি পেস্ট বানাতে হবে। তারপর মুখ পরিষ্কার করে মুখে সমানভাবে লাগাতে হবে এবং শুকনো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। শুকিয়ে গেলে তারপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- উপকারিতাঃ এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সতেজ রাখে।
বিট রুট ডিটক্স ফেসপ্যাকঃ
- উপাদানঃ ২ চা চামচ বিটরুট রস, ১ চা চামচ এলোভেরা জেল, ১ চা চামচ গোলাপ জল।
- পদ্ধতিঃ সব উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করতে হবে। তারপর পরিষ্কার মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- উপকারিতাঃ এটি ত্বক পরিষ্কার করে এবং ত্বকের টক্সিন দূর করে।
বিট রুট রস ত্বকের সরাসরি ব্যবহার করার আগে ত্বকের একটি ছোট অংশে একটি লাগিয়ে
পরীক্ষা করে দেখতে হবে। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করাই যথেষ্ট। এই
ফেসপ্যাকগুলো নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক হবে উজ্জল, মসৃণ এবং স্বাস্থ্যকর।
বিট রুট পাউডার দিয়ে রূপচর্চা
বিট রুট পাউডার দিয়ে রূপচর্চা করা একটি সহজ এবং কার্যকারী উপায়। একটি
প্রাকৃতিক উপাদান যার রূপচর্চায় ব্যবহার করা হয়। বিট রুট পাউডার বাজারে
কিনতে পাওয়া যায়। তবে আপনি যদি মনে করেন বাড়িতে বানাবেন সেটাও করতে
পারেন। বিট রুট পাউডার দিয়ে রূপচর্চার অনেক কিছুই করা যায়।যেমন ফেসপ্যাক বানানো
এবং টোনার তৈরি সহজেই করা যায়।
আরো পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে কি খেলে মোটা হওয়া যায়
বিট রুট পাউডার দিয়ে ফেসপ্যাকঃ
- উপাদানঃ১ চা চামচ বিটরুট পাউডার , ১ চা চামচ বেসন, ১ চা চামচ দুধ বা গোলাপ জল।
- পদ্ধতিঃ সব উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর মুখে এবং গলায় ভালোভাবে লাগাতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- উপকারিতাঃ এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে মসৃণ করে।
বিট রুট পাউডার দিয়ে স্ক্রাবঃ
- উপাদানঃ ১ চা চামচ বিটরুট পাউডার, ১ চা চামচ চিনি, এক চা চামচ নারিকেল তেল।
- পদ্ধতিঃ সব উপাদানগুলো একসাথে মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করতে হবে। মুখে এবং গলায় লাগিয়ে হালকা হাতে ম্যাসাজ করতে হবে ২-৩ মিনিট। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- উপকারিতাঃ এটি ডেড স্কিন সেল দূর করে এবং ত্বককে কোমল রাখে।
বিট রুট পাউডার দিয়ে লিপ বামঃ
- উপাদানঃ ১/২ চা চামচ বিট রুট পাউডার,১ চা চামচ ভ্যাসলিন বা নারকেল তেল।
- পদ্ধতিঃ বিট রুট পাউডার ও ভ্যাসলিন মিশিয়ে একটি মিশ্রন তৈরি করতে হবে। তারপর ঠোঁটে লাগাতে হবে। রাতে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন।
- উপকারিতাঃ এটি ঠোঁটকে প্রাকৃতিকভাবে গোলাপি ও নরম করে।
বিট রুট পাউডার দিয়ে টোনারঃ
- উপাদানঃ ১ চা চামচ বিট রুট পাউডার, ১ কাপ গোলাপ জল।
- পদ্ধতিঃ গোলাপ জলে বিট রুট পাউডার মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে রাখুন। দিনে ২-৩ বার মুখে স্প্রে করুন।
- উপকারিতাঃ এটি ত্বককে হাইড্রেট রাখে এবং সতেজ করে।
চুলের যত্নে বিট রুট পাউডারঃ
- উপাদানঃ ২ চা চামচ বিটরুট পাউডার, ২ চা চামচ,দই, ১ চা চামচ মধু।
- পদ্ধতিঃ সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে। তারপর চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- উপকারিতাঃ এটি চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং খুশকি দূর করতে সাহায্য করে।
কাঁচা বিট রুটের মত বিট রুট পাউডার দিয়ে একইভাবে রূপচর্চা করা
যায়। নিয়মিত এই পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করে ত্বক এবং চুলের যত্ন করলে
ত্বক এবং চুল উভয় স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর থাকে।
বিট রুট দিয়ে লিপ বাম
বিট রুট দিয়ে লিপ বাম তৈরি একটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি।বিট রুট দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে
লিপ বাম তৈরি করা সহজ এবং এটি ঠোঁটকে নরম ও প্রাকৃতিকভাবে গোলাপি করতে সাহায্য
করে। নিচে বিট রুট দিয়ে লিপ বাম তৈরি করার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করা হলোঃ
- লিপ বাম তৈরির উপকরণঃ ১ চা চামচ বিট রস, ১ চা চামচ ভেসলিন বা নারিকেল তেল।
- তৈরি করার পদ্ধতিঃ প্রথমে একটি তাজা বিট রুট কেটে রস বের করে নিতে হবে। তারপর একটি পাত্রে নারিকেল তেল বা ভেসলিন গরম করতে হবে। তেল বা ভেসলিনের সঙ্গে বিটরুট মিশিয়ে ভালোভাবে নাড়তে হবে। এই মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে গেলে একটি ছোট পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
- ব্যবহার পদ্ধতিঃ প্রতিদিন ঠোঁটে হালকা করে লাগাতে হবে। রাতে ব্যবহার করলে সকালে ঠোঁট নরম ও গোলাপি দেখাবে।
- উপকারিতাঃ প্রতিদিন ব্যবহারে ঠোঁটকে প্রাকৃতিকভাবে গোলাপি করে। ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করে এবং ঠোঁটকে হাইড্রেট রাখে। রাসায়নিক মুক্ত এবং প্রাকৃতিক হওয়ায় এটি ব্যবহার করা নিরাপদ।
সতর্কতাঃবিট রুট থেকে রং তীব্র হলে পরিমাণ কমিয়ে নিতে হবে। দীর্ঘদিন
তাজা রাখতে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন। প্রাকৃতিক এই লিপবাম ব্যবহার করলে আপনার
ঠোঁট হবে প্রাকৃতিক ভাবে সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর।
বিট রুট দিয়ে চুল কালার
বিট রুট দিয়ে চুল কালার করা খুব সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি। বিট রুট একটি
প্রাকৃতিক উপাদান যা চুলের রং পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। বিট রুট দিয়ে
চুলে কালার করলে চুলে একটি সুন্দর কালার আসে এবং এটি রসায়নিক মুক্ত হয়।
বিটরুট দিয়ে কিভাবে চুলে কালার করতে হবে তা নিচে দেওয়া হলঃ
- উপাদানঃ ১-২ কাপ বিট রুট রস, নারিকেল তেল বা অ্যালোভেরা জেল ১ চা চামচ।
- তৈরি করার পদ্ধতিঃ প্রথমে একটি বিটরুট নিতে হবে। তারপর তা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে রস বের করে নিতে হবে। তারপর বিট রুটের রস, এলোভেরা জেল এবং নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। তারপর মিশ্রণটি একটি ছাকনা দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে।
- ব্যবহার পদ্ধতিঃ চুল ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর বিট রুটের মিশ্রণটি ভালোভাবে সমস্ত চুলে লাগাতে হবে। চুলে লাগানোর পর একটি শাওয়ার ক্যাপ লাগিয়ে রাখতে হবে এবং এক থেকে দুই ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। তারপর নরমাল পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।
- উপকারিতাঃ চুলে প্রাকৃতিকভাবে লালচে রং আনতে সাহায্য করে। রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় চুলের কোন ক্ষতি হয় না। চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
আরো পড়ুনঃ টক দই খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
সতর্কতাঃ বিট রুট রং চুলে দীর্ঘক্ষণ থেকে যেতে পারে তাই ব্যবহারের পর চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। বিট রুট এর রংয়ের দাগ লাগতে পারে হাতে তাই ব্যবহার করার সময় গ্লাভস পরুন এবং হাত ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। চুলের প্রাকৃতিক রং পরিবর্তনের জন্য এই পদ্ধতিটি নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। এটি একটি প্রাকৃতিক উপায় যা চুলে সুন্দর রং নিয়ে আসতে সাহায্য করবে।
বিট রুট পাউডারের উপকারিতা
বিট রুট পাউডারের উপকারিতা অনেক। বিট রুট পাউডার বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ও
রূপচর্চার উপকারিতার জন্য জনপ্রিয়। এটি প্রাকৃতিকভাবে নানা পুষ্টি উপাদানের
সমৃদ্ধ যা শরীর ও ত্বকের জন্য উপকারী। নিচে বিট রুট পাউডারের কিছু উপকারিতার
কথা উল্লেখ করা হলোঃ
স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা মানুষের স্বাস্থ্যের
জন্য অনেক উপকারী। বিট রুটের বেশ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। চলুন
আমরা বিট রুটের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।
- রক্তে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধিঃ বিট রুট পাউডার আয়রন সমৃদ্ধ, যার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি অ্যানিমিয়ার সমস্যা প্রতিরোধ করতে অত্যন্ত কার্যকরী।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ বিট রুটে থাকা নাইট্রেট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে যার হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়।
- শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধিঃ বিট রুট পাউডার শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে ,ফলে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের সহনশীলতা বেড়ে যায়।
- হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ বিটরোড পাউডার ফাইবার সমৃদ্ধ যা পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ফলে হজম শৃক শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- ডিটক্সিফিকেশনঃ এটি লিভার ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
ত্বকের উপকারিতাঃ বিট রুট পাউডার ত্বকের জন্য অনেক
উপকারী। ত্বকের যত্নে বিট রুট পাউডার বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে
থাকে। নিচে ত্বকের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিঃ বিট রুট পাউডার ত্বককে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত করতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে দাগ মুক্ত করে এবং পরিষ্কার রাখে।
- অ্যান্টি এজিং গুনাবলীঃ বিট রুটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকে যা, বয়স জনিত পরিবর্তন যেমন বলিরেখা ও দাগ কমাতে সাহায্য করে।
- ত্বকের দাগ কমানোঃ এটি টকের পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের মসৃণতা বৃদ্ধি করে।
ত্বকে নতুন কোষের গঠনঃ রুটে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের নতুন কোষ গঠনের
সহায়তা করে যা ত্বককে তরুণ এবং স্বাস্থ্যকর দেখায়।
চুলের উপকারিতাঃ বিট রুট পাউডার চুলের জন্য অনেক উপকারী। চুলের
বিভিন্ন যত্নের জন্য বিট রুট পাউডার ব্যবহার করা হয়। বিট রুট পাউডার দিয়ে
সহজে চুলের বিভিন্ন প্যাক তৈরি করে চুলের যত্ন নেওয়া যায়। নিচে
চুলের যত্নে বিট রুট পাউডারের উপকারিতা আলোচনা করা হলোঃ
- চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করাঃ ভিটামিন সি ও মিনারেল চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
- চুলের রং উজ্জ্বল করাঃবিট রুট পাউডার প্রাকৃতিক ভাবে চুলের রং উজ্জ্বল করতে পারে।
- চুল পড়া কমানোঃ বিট রুটে থাকা পুষ্টি উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
অন্যান্য উপকারিতাঃ বিট রুট পাউডার একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান যা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। যেমন বিট রুট পাউডার কম ক্যালরি এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।বিট রুটের নাইট্রেট রক্তের প্রবাহ উন্নত করে যা মাথা ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। বিট রুটের নাইট্রেটস মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।
বিট রুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম
বিট রুট পাউডার খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানা দরকার। কারণ কোন কিছু
অনিয়ম করলে সেখান থেকে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব হয় না। বিট রুটও সেই রকম
নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে বা খেলে তা থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। তাই আমরা
যদি বিট রুট থেকে ভালো ফলাফল পেতে চায় তাহলে অবশ্যই তা নিয়ম মেনে খাব বা
ব্যবহার করব।
বিট রুট থেকে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য চলুন আমরা বিট রুট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে
জেনে নিই কিভাবে বিট রুট আমাদের খেতে হবে।
- সামগ্রিক ডোজঃ সাধারণত দিনে ১ থেকে ২ চা চামচ বিট রুট পাউডার খাওয়া যেতে পারে। তবে আপনার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অনুযায়ী এটি পরিবর্তন হতে পারে।
- পানি বা রসের সঙ্গেঃ বিট রুট পাউডার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে জুস বানিয়ে খাতে পারেন। আপনি চাইলে এতে লেবুর রস বা মধু যোগ করতে পারেন যা জুসের স্বাদ আরো বাড়িয়ে দিবে এবং আরো বেশি পুষ্টিকর হবে।
- খাবারের সঙ্গেঃ আপনি খাবারের সঙ্গেও বিট রুট পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন। যেমন সালাদ, ডাল বা রুটির সাথে বিট রুট পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন।
পরামর্শঃ আপনার যদি কোন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে যেমন ডায়াবেটিস কিডনি
সমস্যা তাহলে বিট রুট পাউডার খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।
কেননা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত বিদ্যুৎ পাউডার খেতে গেলে আপনার শারীরিক
কোন সমস্যা হতে পারে। তাই সচেতন থাকা ভালো।
সতর্কতাঃ পাউডার অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ
এতে অক্সালেট এর পরিমাণ বেশি থাকে যা কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
বিট রুট জুসের উপকারিতা
বিট রুট জুসের উপকারিতা অনেক। বিট রুট জুস স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আপনি যদি বিট রুটের জুস নিয়মিত সঠিক নিয়মে খেতে পারেন তাহলে আপনি অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা পাবেন।কেননা বিট রুট একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
আরো পড়ুনঃ চিয়াসিডের উপকারিতা ও অপকারিতা
বিটরুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আইরন, ফোলেট, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,
ভিটামিন সি যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তাই আপনি
যদি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চান তাহলে নিয়মিত নিয়ম মেনে বিট রুটের জুস
খান। বিট রুট ছোট বড় সকলের জন্য খুবই উপকারী। নিচে বিট রুটের জুস এর
উপকারিতা আলোচনা করা হলোঃ
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ বিটরুটের নাইট্রেট থাকে যা শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডে পরিণত হয়। এটি রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায় এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
- রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করেঃ বিট রুটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ফুলেট যাহ হিমোগ্লোবিন বাড়িয়ে রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে।
- শরীরের সহনশীলতা বাড়ায়ঃ বিট রুট জুস শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায় যা শারীরিক পরিশ্রমের সময় কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- হজম শক্তি উন্নত করেঃ এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- ত্বকেরউজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ বিটরুটে এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি থাকে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ত্বককে সুস্থ রাখে।
- ডিটক্সিফিকেশন এর সহায়তা করেঃ বিট রুট লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং টক্সিন দূর করে।
- মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়ঃ বিট রুটে থাকা নাইট্রেট রক্ত প্রবাহ উন্নত করে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বিট রুট জুস পান করতে
পারেন। তবে অতিরিক্ত পান না করে নিয়মিতভাবে পরিমিত পরিমাণে পান করবেন।
বিট রুট কি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর
বিট রুট কি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর এ প্রশ্নটি অনেকের মনে আসতে পারে। সাধারণভাবে বিট রুট ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং এটি ত্বকের জন্য উপকারী। তবে কিছু ক্ষেত্রে বিট রুট ত্বকের জন্য সামান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
উপকারিতাঃ
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়ঃ বিট রুটে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ফ্রি রেডিক্যাল এর ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
- ব্রণের সমস্যা কমায়ঃ বিট রুটের অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান ব্রণ এবং লালচে দাগ কমাতে সাহায্য করে।
- ত্বক ময়েশ্চারাইজ করেঃ বিট রুটে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান হিউমেকট্যান্ট ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে।
সম্ভাব্য ক্ষতিঃ
- এলার্জি হওয়ার সম্ভাবনাঃ কিছু মানুষের ত্বকে বিট রুট ব্যবহার করলে অ্যালার্জি হতে পারে। যেমন লালচে দাগ চুলকানি বা ফুসকুড়ি।
- সংবেদনশীল ত্বকের সমস্যাঃ সংবেদনশীল ত্বকে বিট রুট ব্যবহারে ত্বক শুষ্ক বা চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- রংয়ের দাগ পড়াঃ বিট রুটে প্রাকৃতিক লাল রং থাকে যা ত্বকে ব্যবহার করার পরে ত্বকে রং এর দাগ পড়তে পারে।
সতর্কতা ও ব্যবহার বিধিঃ ব্যবহারের আগে একটি প্যাচ টেস্ট করতে
পারেন। অতিরিক্ত বিট রুট ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। মধু বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে
বিট রুটের পেস্ট ব্যভার করলে তা নিরাপদ এবং ময়েশ্চারাইজিং হয়।যদি ত্বকে
কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তবে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার বন্ধ করবেন এবং ত্বক
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবেন।
লেখক এর মন্তব্যঃ বিট রুট দিয়ে রূপচর্চা
বিটরুট দিয়ে রূপচর্চা করার বিষয়ে উপরে অনেক আলোচনা করা হয়েছে।বিট রুত একটি
প্রাকৃতিক উপাদান যা দিয়ে আপনি রূপচর্চা করলে প্রাকৃতিকভাবে আপনি সুন্দর হয়ে
উঠবেন। সবকিছুর নিয়ম আছে নিয়ম মেনে কাজ করলে সেখান থেকে ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
বিট রুট দিয়েও আপনি নিয়ম মেনে নিয়মিত রূপচর্চা করলে ভাল ফল পাবেন।
বিট রুট দিয়ে শুধু রূপচর্চায় হয় এমনটা নয় এটি স্বাস্থ্যর জন্য অনেক উপকারী। নিয়মিত বিট রুটের জুস খেলে শরীর অনেক ভালো থাকে। এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। আমরা যারা সৌন্দর্য সচেতন এবং স্বাস্থ্য সচেতন তারা নিয়মিত নিয়ম মেনে বিটরুট ব্যবহার করতে পারি।সঠিকভাবে বিটরুট এর ব্যবহার করলে আমরা এখান থেকে ভালো ফলাফল পেতে পারি।
আর এস ড্রিমস ব্লগেনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url