চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা
পেয়ারা পাতার ৮টি উপকারিতা চিয়া সিডকে সুপার ফুড বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই এই চিয়াসিড খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। কারণ এতে বেশি পরিমাণে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। বীজ জাতীয় যেকোনো খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
বর্তমানে অনেক গুন স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে, তেমনি প্রতিদিনের খাবার ও এর
পুষ্টিগুণ নিয়েও মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। এজন্য অনেকেই এই চিয়াসিডকে আদর্শ
খাবার হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
পেজ সূচীপত্রঃ চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা
- চিয়া সিড কি
- চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
- চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
- চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
- চিয়া সিডের ব্যবহার
- ওজন কমাতে কার্যকর
- চিয়া সিড দিয়ে চুলের যত্ন
- চিয়া সিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- চিয়া সিড গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে
- লেখকের মন্তব্যঃ চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড কি
চিয়া সিড মূলত মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া উদ্ভিদের বীজ। এটি মধ্য আমেরিকার অনেক
অংশে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত শস্যের তালিকায় পড়লেও একে এক ধরনের ভেষজ বলা
যায়। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির প্রধান খাদ্য তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত
ছিল। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের দানার মত। চিয়া সিড একটি সুপার
ফুড।
চিয়া সিড সব ধরনের আবহাওয়ায় হয় এবং এতে পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন হয় না। চিয়া সিড সাদা ও কালো রংয়ের হয়। এখানে উল্লেখ্য যে চিয়াসিড এবং তোকমা নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে। অনেকেই তোকমা দানাকে ভুল করে চিয়াসিড মনে করেন। চিয়াসিড তোকমার চাইতে সাইজে ছোট।
আরও পড়ুনঃ কলার উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিড শরীরের হৃদরোগের ঝুঁকি ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। চিয়া
সিড রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
এছাড়া চিয়া সিড শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে গ্যাসের সমস্যা
কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।
এর পাশাপাশি চুল ত্বক ও নখ সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। চিয়া সিডের অনেক
উপকারিতা রয়েছে। নিচে চিয়া সিড এর উপকারিতা উল্লেখ করা হলঃ
- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে শক্তিশালী করে।
- ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
- উচ্চ পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- খাবারের আগ্রহ কমিয়ে দেয়, ক্ষুধা নিবারণ করে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফাইবারের ভালো উৎস হওয়ায় এর পুষ্টি উপাদান শরীরে শক্তি প্রদান করে।
- শর্করার মাত্রা শরীরে নিয়মিত প্রবেশের ফলে লম্বা সময় ধরে স্থিতিশীল শক্তির স্তর বজায় রাখে।
- কাজ করার পর ক্লান্তি দূর করতে ও স্ট্যামিনা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও মলাশয় পরিষ্কার করে।
- বদহজম থেকে বাঁচায় এবং সঠিকভাবে হজম প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে।
- চিয়া সিড মানব শরীরের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।
- কাজে মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও একাগ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- হাটু ও জয়েন্ট এর ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
- বিশেষজ্ঞদের মতে মুরগির ডিম থেকে তিনগুণ বেশি পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
- দুধের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। যা শরীরের হাড়কে মজবুত করে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
- ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখতে এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
প্রতিটি খাবারের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও থাকে। তেমনি চিয়াসিডেরও কিছু অপকারিতা রয়েছে। নিচে এর অপকারিতা তুলে ধরা হলোঃ
- চিয়া সিড বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। কারণ চিয়া সিডের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই অল্প পরিমাণে চিয়া সিড খাওয়া উচিত।
- অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।
- চিয়াসিড প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- চিয়া সিড দেহের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। তাই অতিরিক্ত চিয়াসিড সেবনে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- চিয়াসিড কিছু ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যারা নিয়মিত ওষুধ খান,তারা অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে চিয়া সিড পরিমাণ অনুসারে খাবেন।
- এটি যেহেতু দেহের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, তেমনি পরিমাণ মতো না খেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
- এর কারণে শরীরের এলার্জির সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
চিয়া সিড পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবার গুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রাচীন অ্যাজটেক
জাতি একে সোনার চেয়েও মূল্যবান মনে করত। বীজ জাতীয় যে কোন
খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ
এগ্রিকালচার এর ন্যাশনাল নিউট্রিয়েন্ট ডাটাবেজ হতে প্রাপ্ত তথ্য
অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে রয়েছেঃ
- ৪৮৬ ক্যালোরি,৬% পানি,৪২.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৩৪.৪ গ্রাম ফাইবার,১৬.৫ গ্রাম প্রোটিন, ০ গ্রাম চিনি, ৩০.৭ গ্রাম ফ্যাট।
- দুধের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি ক্যালসিয়াম।
- কমলার চেয়ে সাতগুণ বেশি ভিটামিন সি।
- পালং শাকের চেয়ে তিনগুণ বেশি আয়রন।
- কলার চেয়ে দ্বিগুণ পটাশিয়াম।
- স্যামন মাছের থেকে আট গুণ বেশি ওমেগা -৩
চিয়া সিডের ব্যবহার
চিয়া সিড সরাসরি যেকোনো ফলের স্মোদি বা জুসের সাথে পান করা যায়। শুধু
পানিতে মিশিয়েও পান করা যায়। এর নিরপেক্ষ সাধের কারণে এটা সব ধরনের খাবারের
সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। বেক করা খাবার, সুপ, সালাদ ইত্যাদির সাথে মিশিয়েও
চিয়া সিড খাওয়া যায়। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ।
বর্তমান সময়ে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল বয়সের সকল পেশার মানুষই পূর্বের
তুলনায় নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশি সচেতন। আর সেই সচেতনতার ভূমিকা পালন
করে আসছে বেশ কিছু খাদ্য উপাদান যেগুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। চিয়া সিড
বর্তমান সময়ে একটি আলোচিত নাম হলেও অনেকেই হয়তো এর পুষ্টিগুণ আগুন
সম্পর্কে জানে না।
খাওয়ার আগে ৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে দ্রুত ওজন কমাতে খালি পেটে সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সীড ও দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। চিয়া সিডকে আলাদা করে রান্না করা লাগে না।
আরও পড়ুনঃ ডার্ক চকলেট খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে কার্যকর
চিয়া সিডে উচ্চ মাত্রার ফাইবার এবং প্রোটিন থাকায় যারা ওজন কমাতে চান তাদের
জন্য এটি বেশ উপকারী। প্রতি ২৮ গ্রাম চিয়া সিডে ১০ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার থাকে,
যা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদার প্রায় ৩৫ %। চিয়া সিডে বিদ্যমান ফাইবার
মূলত দ্রবণীয়। এটি পানি শোষণ করে জেলীর মত আঠালো বর্ণ হয় এবং আমাদের পাকস্থলীতে
যেয়ে বিপাকক্রিয়ার গতিধীর করে আনে।
ফলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং ক্ষুধা কম লাগে। গবেষণা থেকে প্রমাণিত
দ্রবনীয় খাদ্য আঁশ আমাদের দেহে মেটাবলিজম বুস্ট করে ওজন কমাতে সাহায্য, করে
বিশেষ করে যারা ওভারওয়েট এবং ওবেসিটিতে আক্রান্ত। চিয়া সিডের প্রোটিন আমাদের
ক্ষুধা নিবারণ এবং অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমিয়ে আনে।
চিয়া সিড দিয়ে চুলের যত্ন
চুলের যত্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাড়িতে আপনি অনেক সহজেই চিয়া সিডের
হেয়ার মাস্ক বানিয়ে নিতে পারবেন। এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ চিয়াসিড
ভিজিয়ে নিন। ভেজানোর পর জেলে রাখার ধারণ করলে মিশ্রণে ২ চামচ আপেল সিডার
ভিনেগার, ৬ চা চামচ নারিকেল তেল এবং অর্ধেক কাপ মধু মিশিয়ে নিন।
এরপর মাইক্রোওয়েভে মিশ্রণটি ৩০ সেকেন্ডের জন্য গরম করে নিন। তৈরি হয়ে গেলে এই
হেয়ার মাস্ক ঘরের তাপমাত্রায় এনে চুলে লাগিয়ে 5 থেকে 10 মিনিট রেখে
দিন। তারপর গোসল করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে অন্তত একদিন করে
চিয়াসিডের হেয়ার মাস্কটি ব্যবহার করতে পারেন। এটি হেয়ার কন্ডিশনিং এর কাজ
করে।
বাচ্চাদের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতাঃ চিয়া সিডের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড
বাচ্চাদের ব্রেনের বিকাশে এবং বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে
থাকা সলিউবল ফাইবার শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। জিংক,
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় বাচ্চাদের পেশি গঠনের সাহায্য করে
এবং সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মেথির উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
চিয়া সীড বেশি খেলে পেটের সমস্যা দেখা যায়। এটি বেশি খাওয়ার ফলে প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং অন্যান্য ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। চিয়াসিড বেশি খাওয়ার কারণে ওজন অতিরিক্ত মাত্রায় কমে যায়,যার ফলে শরীর দুর্বল হয় ও কাজ করার ক্ষমতা হারায়। বেশি খেলে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়।
চিয়া সিড গর্ভাবস্থায় খাওয়া যাবে
চিয়া সিড গর্ভাবস্থায় অবশ্যই খাওয়া যাবে। একজন গর্ভবতী মহিলার সুস্থ
থাকতে দিনে প্রায় ৬৫৯ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড দরকার। চিয়া সিড খেলে
অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি ফলিক এসিডও পাওয়া যায় যা খুবই
উপকারী। ফলিক এসিড সময়ের আগে শিশু জন্মানোর আশঙ্কা কমায়, জন্মগত ত্রুটি
রোধ করে এবং শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
শিশুর জন্য উপকারী চিয়া সিডে ভরে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। সন্তানের
মস্তিস্ক ও চোখের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে এই উপাদান।তাই হবু মায়েরা
অবশ্যই খাবারের তালিকায় রাখুন এই সুপারফুড। চিয়াসিডে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা শিশুর
সথিকভাবে হাড় ও দাঁত বিকাশের জন্য অপরিহার্য।
লেখকের মন্তব্যঃ চিয়া সিডের উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড একটি সুপার ফুড এটাতে কোন সন্দেহ নাই। এর উপকারিতা অনেক এবং সেই সাথে কিছু অপকারিতাও রয়েছে যা আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। যেহেতু এই খাবারের উপকারিতা অনেক সেহেতু আমরা অনায়াসে এই খাবারটি আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি। এই খাবারটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক কার্যকরী ভুমিকা রাখবে।
তবে আমরা যেহেতু স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ তাই আমরা এই খাবারটি নিয়মিত খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবো। নিজে সচেতন হবো এবং অন্যকেও সচেতন করবো। সচেতনভাবে যেকোনো কাজ করলে সেখান থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে চিয়াসিড ব্যবহার করি এবং উপকৃত।
আর এস ড্রিমস ব্লগেনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url